কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও এর স্বাস্থ্য উপকারিতা
কালোজিরা আমাদের দৈনন্দিন খাবারের এক অন্যান্য অংশ হতে পারে, নিয়মিত কালোজিরা
খেলে যেমন শরীরে নানা রোগ বালাই থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। তেমনি মধুর সাথে
মিশিয়ে খেলে আরো অনেক বেশি উপকার পাওয়া যায় তবে আমাদের অবশ্যই নিয়ম মেনে খেতে
হবে। যদি ঠিকমতো নিয়ম করে আমরা খেতে পারি তাহলে বেশি খাওয়ার পর যে পার্শ্ব
প্রতিক্রিয়া সৃষ্ট হয় তার থেকে সহজেই বাঁচা যায়। আমরা সকলেই জানি কালোজিরা
অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে।
সূচিপত্র: কালোজিরা খাওয়ার সঠিক নিয়ম ও এর গুণাবলী সম্পর্কে ধারণা,
- কালোজিরা কি কি পুষ্টি উপাদান রয়েছে
- কালোজিরা খাওয়ার সঠিক নিয়ম
- সকালে খালি পেটে কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম
- কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম হাদিস অনুসারে
- ওজন কমাতে কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম
- মধু আর কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম
- কালোজিরা কখন কিভাবে খেতে হয়
- মধু ও কালোজিরা রসুন একত্রে খেলে কি হয়
- কালোজিরার সম্পর্কে শেষ কথা বা তথ্য সমূহ
কালোজিরা কি কি পুষ্টি উপাদান রয়েছে
আপনারা জানেন কালোদের অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে কিন্তু কি কি উপাদান রয়েছে তা
আমরা সঠিক জানিনা পুষ্টিবিদরা পতিক গ্রাম কালোজিরাতে প্রোটিন পরিমাণ ২০৮
মাইক্রগ্রাম, ইয়াসিন ৫৭ মাইক্রগ্রাম,ক্যালসিয়াম ১.৮৫ মাইক্রগ্রাম, আই ডোন্ট ১০৫
মাইক্রোগ্রাম, কপার ১৮ মাইক্রগ্রাম, ফসফরাস ৫.২৬ মাইক্রগ্রাম, ফলাসিন ৬১০ আইউ
ভিটামিন বি১ ১৫ মাইক্রোগ্রাম ইত্যাদি। কালোজিরার প্রধান উপাদানের মধ্যে আমিষের
পরিমাণ ২১ শতাংশ, ভেষজ তেল ও চর্বি বা স্নেহের পরিমাণ ৩৫ শতাংশ, শর্করা পরিমাণ ৩৮
শতাংশ, এবং ভিটামিন ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ। কালোজিরায় অন্যতম উপাদানের মধ্যে
রয়েছে থাইমু কি নন নাইজেলোন ও স্বাস্থ্যকর তেল। কালোজিরা তেলে অলিক এসিড নিলোক
এসিড ফসফেট লোহ ফসফরাস ক্যালসিয়াম পটাশিয়াম ম্যাগনেসিয়াম আয়রন, জিংক,
সেলেনিয়াম, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন-বি, ভিটামিন বিটামিন বি-২, ভিটামিন-সি আরো
অন্যান্য নানা ধরনের জীবন ও নাশক উপাদান যা আমাদের শরীরে ও স্বাস্থ্যের জন্য
একরকম আশীর্বাদস্বরূপ।
সকালে কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম
সকালে কালোজিরা খেলে রাতের চেয়ে বেশি উপকার পাবেন প্রতিদিন সকালে খালি
পেটে এক চিমটি পরিমাণ এক থেকে ২.৫০ গ্রাম কালোজিরা খেলে শর্করা নিয়ন্ত্রণে
থাকবে। কালোজিরা নিয়ে এক গ্লাস পানির সাথে মিশিয়ে খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা
ঠিক থাকবে সকালে গরম ভাতের সাথে বা চায়ের সাথে মিশিয়ে খেলে নারী পুরুষ উভয়ের
যৌন ক্ষমতা বাড়তে ও যৌন সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করবে। সকালে মধুর সাথে
কালোজিরা মিশিয়ে খেলেও আপনি বেশ উপকার পাবেন মনে রাখবেন কখনো কাঁচা কালোজিরা
খাবেন না। এতে পেট খারাপ হতে পারে প্রয়োজনের তেল ছাড়া ভেজে বোতলে ভরে রেখে দিন
চাইলে ভর্তা সাথে বা কালোজিরা ভর্তা অল্প করে খেতে পারেন।
কালোজিরা খাওয়ার সঠিক নিয়ম
কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম অনুসারে পেট খারাপের সমস্যা সকালে ও বিকালে কালোজিরা
হালকা ভেজে পুরো করে প্রায় ৫০০ মিলিগ্রাম পরিমাণ ৭ থেকে ৮ চামচ দুধে মিশে ৭ দিন
নিয়ম করে খেলে ভালো ফলাফল পাবেন। ঠান্ডা কাশি থেকে আরাম পেতে এক চা চামচ
কালোজিরা তেলের সাথে এক চা চামচ মধু অথবা এক কাপ গরম লাল চায়ের সাথে আধা চা চামচ
কালোজিরা তেল মিশিয়ে দিনে তিনবার খাবেন।
শুধু কালোজিরা খাওয়া থেকে ভাত বা রুটির সাথে এমনকি মুড়ির সাথে খাওয়া
ভালো তবে কোন গরম পানিও বা গরম খাবারের সাথে যেমন চা গরম ভাতের সাথে মিশিয়ে খেলে
বেশ উপকার পাবেন। কালোজিরা খাওয়ার তেমন নিয়ম নেই। কিন্তু সব খাবারই নিয়ম করে
খেলে শরীরের যেমন উপকার হয় তেমনি খাবারের সঠিক পুষ্টিগুণ শরীর গ্রহণ করতে পারবে।
কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম হাদিস সমূহ
কালোজিরা ব্যবহার করবে, কেননা এতে একমাত্র মৃত্যু ব্যতীত সর্বরোগের মুক্তি
এতে রয়েছে। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তোমরা
কালোজিরা ব্যবহার করবে কেননা এতে একমাত্র মৃত্যু ব্যতীত সর্ব রোগের মুক্তি এতে
রয়েছে।
- হযরত আবু হুরায়র(রা:) থেকে বর্ণিত-কালোজিরার তেল মালিশ করে এতে প্রতিটি রোগে নিরাময় আছে ব্যতীত ব্যতীত ছাড়া। তিরমিজি, হাদিস নম্বর-২৭৩৭।
- হযরত আনাস (রা:) থেকে বর্ণিত-নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন যখন রোগ যন্ত্রণা খুব বেশি কষ্টদায়ক হয় তখন এক চিমটি পরিমাণ কালোজিরা নিয়ে খাবে তারপর পানি ও মধু সেবন করবে। (মুজামুল আওসাদ :তাবরানী)
- হযরত আবু হুরায়রা(রা:) থেকে বর্ণিত-যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে সাতটি কালোজিরা খাবে। সে কোনদিন পাগল হবে না এবং কোনদিন কুষ্ঠ রোগের আক্রান্ত হবে না। সহীহ বুখারি হাদিস নম্বর ৫৬৮৭
- হযরত আবু বকর(রা:)থেকে বর্ণিত-তোমরা তোমাদের নাকের ভেতরে কালোজিরার তেল দাও এতে প্রতিটি রোগে নিরাময় আছে ব্যতীত ব্যতিক ছাড়া। ইবনে মাশা হাদিস নম্বর- ৩৪৭২
উপরে উল্লেখিত হাদিসগুলো থেকে আমরা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারে যে কালোজিরা
খাওয়া নিয়ে আমাদের ইসলাম ধর্মে অনেক নিয়ম রয়েছে। সেগুলো ঠিকমতো অনুসরণ করে
যদি নিয়মিত কালোজিরা খাওয়া হয় তবে সবচেয়ে উপকারী ফলাফল সহজে পাওয়া যাবে।
প্রতিদিন সকালে যদি খালি পেটে কালোজিরা খান তাহলে আসলেই অনেক বেশি উপকার পাবেন।
বিশেষ করে সকালে খালি পেটে মধুর সাথে কালোজিরা খেলে রক্তে থাকা ক্ষতিকারক পদার্থ
দূর করে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখে এবং নানা রকমের রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা
বাড়াতে সাহায্য করে।
ওজন কমাতে কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম
কালোজিরা সাথে লেবুর রস মিশিয়ে তা সম্পূর্ণ ভিজিয়ে রেখে রোদে শুকিয়ে
রাখার পর দুই থেকে তিন দিন পর শুকানো চার-পাঁচটা বীজ পানির সাথে প্রতিদিন দুপুর ও
বিকালে খেলে দ্রুত ওজন কমবে। এক চিমটি কালোজিরা পিষে গুড়া তৈরি করে এক গ্লাস
পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে তার মধ্যে একটা চামচ মধু এবং এক চামচ লেবুর নিয়ে
ভালোভাবে মিশিয়ে খালি পেটে সকালে পান করলে দ্রুত ওজন কমতে সাহায্য করবে। এভাবে
নিয়মিত খেলে ঠিক এক সপ্তাহের মধ্যে নিশ্চিত ভালো ফলাফল পাবেন।
এছাড়া একটি বাটিতে অল্প পরিমাণ কালোজিরা নিয়ে তা হালকা গরম পানিতে সাথে
খেয়ে নিন অথবা এক গ্লাস পানিতে ৮ থেকে ১০ টি সারারাত ভিজিয়ে রাখা কালোজিরা
সকালে পানি থেকে নিয়মিত পানি পান করলে ওজন কমবে।
কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার নিয়ম
কালোজিরা ভালোমতো পরিষ্কার করে একটি পাত্রে অল্প আঁচে তেল ছাড়া ভেজে নিয়ে
সকালে বাড়াতে কয়েক দিন দানা চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে। কাঁচা কালোজিরা খাওয়ার
যায় কিন্তু বেশি খেলে বদহজম বা পেট খারাপের সমস্যা হতে পারে ভাজা কালোজিরা একটি
বোতলে রেখে সাথে রেখে দিলে অল্প অল্প করে খেয়ে নেওয়া যায়। মধু আর কালোজিরা
খাওয়ার নিয়ম এক চা চামচ কালোজিরা তেলের সাথে এক চামচ মধু যোগ করে দিনে তিন থেকে
চারবার তিন সপ্তাহ খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে দুই বছরের অধিক শিশুদের মধু ও
কালোজিরা খাওয়ানোর অভ্যাস করলে শিশুদের মস্তিষ্ককার্যকারিতা বাড়ায় পাশাপাশি
মেধাবীকাস ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে বেশ উপকারে আসে।
সকালে মধু আর কালোজিরা একসাথে খেলে শারীরিক দুর্বলাতে কেটে যাবে বাতেরব্যথা
কালোজিরা তেল আর মধু খেলে বাতের ব্যথা কমে যাবে। খালি পেটে সকালে কালোজিরা ও মধু
খেলে ব্লাড প্রেসারের সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে খাবারের অনিহা থাকলে নিয়ম
করে কালোজিরা আর মধু মিশিয়ে দিলে খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি পাবে। তবে খেয়াল রাখতে
হবে বেশি পরিমাণে কালোজিরা খাওয়া যাবেনা।
কালোজিরা কখন কিভাবে খেতে হয় তার নিয়ম
কালোজিরার তেল আমরা বিভিন্ন কিছু সাথে মিশিয়ে খেতে পারি যেমন মধু, পানি,
দুধ। কালোজিরা তেল হিসেবে মধুতে মিশে বা ভেজে পরিমাণ মতো খেতে হয় সাথে ভাত বা
রুটি-মুড়ির সাথে কালোজিরা খাওয়ার অভ্যাস করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় গরম পানি
বা চায়ের সাথে কালোজিরা খেলে উপকার পাওয়া যায়।
আমরা সাধারণত জানি কালোজিরা খাওয়ার তেমন কোন নিয়ম নেই তবে সব জিনিসেরই খাওয়ার
এ নিয়ম অনুসারে খাওয়া উচিত সব খাবারের নিয়ম করে খেলে শরীরের যেমন উপকার হয়
তেমনি খাবারের সঠিক পুষ্টগুণ শরীর গ্রহণ করতে পারে বলে আমরা জেনে থাকি। আমরা
যেকোনো সময় কালোজিরা খেতে পারি যেমন সকালে রাতে।
বিশেষ করে সকালে কালোজিরা খাওয়া অনেক উপকার আমাদের শরীরের জন্য। সকালে কালোজিরা
খেলে রাতের চেয়ে বেশি উপকার পাবেন প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক চিমটি পরিমাণ ১
থেকে ২.৫০ গ্রাম কালোজিরা খেলে শরীরের শর্করা নিয়ন্ত্রণ থাকবে।
মধু,কালোজিরা,রসুন একসাথে খাওয়ার উপকারিতা
রসুন মধু এবং কালোজিরা এই তিনটি প্রাকৃতিক উপাদান বহু প্রাচীনকাল থেকে
চিকিৎসা এবং সুস্থতার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আধুনিক গবেষণা প্রমাণ করেছে এগুলো
স্বাস্থ্য উপকারিতা। প্রাকৃতিক এই উপাদানগু আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বাড়াতে বিভিন্ অসুখ নিরাময় এবং শারীরিক সুস্থতা নিশ্চয়ই করে। এই তিনটি উপাদে
একসঙ্গে খেলে এর কার্যকারিতা বহুবনে বৃদ্ধি পায় প্রাকৃতিক এই মিশ্রণটি শরীরের
ভিতর এবং বাইরে দুই দিকে থেকে উপকার করে।
তিনটি উপকরণ একসাথে খাওয়ার কিছু উল্লেখযোগ্য উপকারিতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বৃদ্ধি করে। নিয়মিত এই মিশ্রণটি সেবন করলে সরাসরি বিভিন্ন রোগের প্রতিরোধে কাজ
করে। এ উপাদানগুলো মিশ্রণ শরীরকে সজীব এবং শক্তিশালী রাখে। কলেসট্রেরল এবং
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখে। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এর গুণে ত্বক উজ্জ্বল হয় এবং চুল
মজবুত থাকে। যেভাবে রসুন মধু কালোজিরা একসাথে খাওয়া যায়- প্রতিদিন সকালে এক
চামচ মধুতে এক চিমটি কালোজিরা গুড়া এবং কুঁচানো রসুন মিশিয়ে খাবেন খালি পেটে এই
মিশ্রণটি খেলে এর পুষ্টগুণ দ্রুত শরীরে কাজ করে।
কালোজিরা সম্পর্কে শেষ কথা
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে জানতে পেরেছেন যে কালোজিরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কতটি
উপকারী একটি পণ্য। কালোজিরার সেবনের মাধ্যমে আমাদের বিভিন্ন রোগের নিরাময় হয়ে
থাকে এবং ইসলাম ধর্ম এটি বর্ণিত রয়েছে কালোজিরা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী
একটি পণ্য। আপনারা সকলে অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন আমার আর্টিকেল থেকে যে কালোজিরা
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সেবন করা অত্যন্ত জরুরী এটি সেবন করে আমাদের দৈনন্দিন জীবন
সচ্ছল হতে সাহায্য করবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবেন। আশা করছি আমার
আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসবে সবাই সুস্থ থাকবেন ভালো থাকবেন ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url